ভাই, প্রোগ্রাম কি শেষ হয়ে গেছে?- টেলিফোনের অপরপ্রান্তে ব্যাকুল জিজ্ঞাসা।
: এখন তো রাত সাড়ে ১০টা। সাড়ে ৭ টার প্রোগ্রাম, এতোক্ষণ কি থাকে?
: জানি ভাই, আমি তো কাজে ছিলাম। মাত্র কাজ শেষ হলো। তবু চলে এসেছি। অন্তত যে জায়গাটায় সমবেত হয়ে সবাই প্রতিবাদ করেছে, সেই জায়গায়টায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাবো। এটাই আমার অংশ গ্রহণ।
টেলিফোন কানের কাছে ধরে চুপ করে থাকি। কি বলা যায় তাকে! শুক্রবারের রাতের প্রোগ্রাম। তার ওপর বাইরে টানা বৃষ্টি। তবু এতোগুলো মানুষ এসে জমায়েত হয়েছে হোপ ইউনাইটেড চার্চ মিলনায়তনে। যারা আসতে পারেননি, তারা ফোনের পর ফোন করে সংহতি জানাচ্ছেন, সমর্থন জানাচ্ছেন। এ যেনো অভূতপূর্ব এক জাগরণ!
জন্মভূমি বাংলাদেশের কষ্টার্জিত টাকা লুট করে কানাডায় বসতি গড়া লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ‘গানে কবিতায় প্রতিবাদের কর্মসূচী দিয়েছিলো বাংলাদেশি কমিউনিটির সাংস্কৃতিক কর্মীরা। না, তারা জনে জনে ফোন করে অনুষ্ঠানে আসার জন্য অনুরোধ করেননি কাউকে। তবু মানুষ এসেছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে। চোর, লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আড়াই শতাধিক লোকের এক সন্ধ্যায় সমবেত হওয়া কম কথা নয়। টরন্টোর বাংলাদেশিরা সেটি করেছেন। লুটেরাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন, তাদের বয়কটের অঙ্গীকার করেছেন।
গতকালের প্রতিবাদী অনুষ্ঠানে কমিউনিটির অংশগ্রহণ, তাদের অঙ্গীকার আমাদের আস্থাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। আমাদের সাহসকে বাড়িয়ে দিয়েছে। লুটেরাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখার দায়বদ্ধতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই আন্দোলনের ফলাফল কি হবে?- এই ভাবনাও অনেকের মনে আছে। ‘কি হবে’- সেটা নিশ্চিত করে আমরাও কিছু বলি না। শুধু এই টুকু বলি, কানাডা চোর ডাকাতের অভয়ারন্য হবে না, কানাডা হবে চোর ডাকাতদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শহর। কানাডার যে কোনো রাস্তায়, শপিং মলে, ভীড়ের মধ্যেও হাটতে হাটতে লুটেরাদের, চোরদের মনের ভেতর একটা ধুকধুকানি থাকবে- ‘আমাকে কেউ চিনে ফেলে নিতো!’- এই ভয় তাদের তাড়া করবে সবসময়। টরন্টোর এই আন্দোলন সেই পরিস্থিতি তৈরি করবে- সেই বিশ্বাস আমাদের আছে।
কাল যারা প্রতিবাদী সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, যারা আসতে না পেরে টেলিফোনে সমর্থন জানিয়েছেন, যারা ঘরে বসে লাইভে এই প্রতিবাদ সভার সঙ্গে একাত্ম থেকেছেন, সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।
একটা কথা বলি, রাস্তায় সবাই সমান গতিতে হাটে না, হাটতে পারে না। রাস্তার পাশে দর্শকও থাকে, হাটবো কি হাটবো না- এমন সংশয়ে থাকা মানুষজনও থাকে। কিন্তু সময়ের ডাকে সব মানুষগুলোই এক স্রোতে শামিল হয়ে যায়। চোর, লুটেরাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের এই স্রোতে প্রতিটি মানুষই এক হয়ে যাবেন, যেতেই হবে। তার কোনো বিকল্প নাই।
আপনাদের প্রত্যেককে আবারও অভিনন্দন।